৪ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার

ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা অসংখ্য ফাঁকফোকরে ভরা: মিসর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
spot_img
spot_img
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় “অসংখ্য ফাঁকফোকর” রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে মিসর। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব, তবে হামাস রাজি না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠবে।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
প্যারিসে ফরাসি ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনে এক আলোচনায় মিসরীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদর আবদেলাত্তি বলেন, “আমরা কাতারের ভাইদের সঙ্গে এবং তুরস্কের সহকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করছি, যেন হামাসকে এই পরিকল্পনায় ইতিবাচক সাড়া দিতে রাজি করানো যায়।”
তিনি আরও বলেন, “ট্রাম্পের পরিকল্পনায় বহু ফাঁক রয়েছে, যা পূরণ করা দরকার”। গাজার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সময়ে কীভাবে বাস্তবায়ন হবে সেই অংশে আরও আলোচনা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন আবদেলাত্তি।
মিসরের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা খুব সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছি এবং হামাসের প্রতিক্রিয়া বুঝতে তাদের সঙ্গে আলোচনা করছি। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব, তবে সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, হামাস যদি এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল হয়ে উঠবে এবং উত্তেজনা আরও বাড়বে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যে কোনো পরিস্থিতিতেই মিসর গাজার জনগণের বাস্তুচ্যুতি মেনে নেবে না।
অন্যদিকে মিসরের প্রধানমন্ত্রী মোস্তাফা মাদবৌলি জানান, ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় এমন কিছু মূলনীতি রয়েছে, যা সবসময় মিসরের অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তার মতে, এই নীতিগুলোর মধ্যে ফিলিস্তিনিদের কোনো বাস্তুচ্যুতি নয়, গাজা বা পশ্চিম তীর দখল নয়, যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা, দুই পক্ষের বন্দিদের মুক্তি এবং গাজা পুনর্গঠনের মতো বিষয়ও রয়েছে।
এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউস গাজার জন্য বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রকাশ করে। এতে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, পরবর্তী পুনর্গঠন কর্মসূচি এবং গাজার রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি নতুনভাবে সাজানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজাকে ‘অস্ত্রশূন্য অঞ্চল’ করা হবে। এছাড়া সেখানে অন্তর্বর্তী শাসনব্যবস্থা চালু থাকবে এবং একটি নতুন আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে এই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া তদারক করবেন সরাসরি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
এতে আরও বলা হয়েছে, পরিকল্পনা অনুমোদনের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামাসকে সব ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে এবং এর বিনিময়ে ইসরায়েল শত শত ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেবে।
এ ছাড়া পরিকল্পনায় শত্রুতা বন্ধ, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধযোদ্ধাদের নিরস্ত্র করা এবং ধাপে ধাপে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের কথা উল্লেখ আছে। গাজা শাসন করবে একটি প্রযুক্তিনির্ভর অন্তর্বর্তী কর্তৃপক্ষ। সেটি আন্তর্জাতিক সংস্থার অধীনে পরিচালিত হবে এবং নেতৃত্ব দেবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
তবে পরিকল্পনাটি ইসরায়েলের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। অন্যদিকে হামাসের জন্য কঠোর ও সুস্পষ্ট শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার কিংবা মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্যও পরিকল্পনায় নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৬ হাজার ২০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো সতর্ক করেছে, গাজা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে, ক্ষুধা ও বিভিন্ন রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

সর্বশেষ নিউজ