দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান বরাবরই প্রথম সারিতেই দেখা যায়। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থানের অবনতি হয়েছে।
দুর্নীতির মাত্রা কোন দেশে কেমন,সে সম্পর্কে ধারণা দিতে জার্মানির বার্লিন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল প্রতি বছর প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেই প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, দুর্নীতির মাত্রা বিশ্বের যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি,তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। এর আগে ২০২২ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২তম।
৫ আগস্ট গণ অঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার সরকারের পতন হলে, ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন এই সরকারের সময়ে আয়োজিত হল গত ফ্যাসিবাদ সরকারের আমলের সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়িত বিভিন্ন দুর্নীতির নিয়ে রিপোর্ট হচ্ছে। ৯অক্টোবর দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ২০০৯-১০ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে
সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পের দুর্নীতির পরিমাণ প্রকাশ করে। ওই সময়ে দুর্নীতি হয়েছে ২৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা থেকে ৫০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৯-১০ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অর্থাৎ গত ১৪ বছরে সড়ক সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পের প্রাক্কলিত দুর্নীতির পরিমাণ ২৯ হাজার কোটি টাকা থেকে ৫০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা।
উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজে সার্বিক দুর্নীতির হার ২৩ – ৪০ শতাংশ। এর মধ্যে নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ প্রাপ্তি ও ঠিকাদারের বিল প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ঘুষ দুর্নীতির হার ১১- ১৪ শতাংশ। নির্মাণ কাজে রাজনীতিবিদ, ঠিকাদার ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে দুর্নীতির হার ১০-২০ শতাংশ।
দরপত্র লাইসেন্স ভাড়া, কার্যাদেশ বিক্রয়, সমঝোতা, স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক চাঁদাবাজি ইত্যাদি ক্ষেত্রে দুর্নীতির হার ২-৬ শতাংশ।
এই গবেষণাটিতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সড়ক ও জনপথে
অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো আওতাভুক্ত করা হয়েছে। গবেষণায় দেশীয় অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো গুরুত্ব দিয়ে এক হাজার কোটি টাকার নিচের প্রকল্পগুলো নির্বাচন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, অনিয়ম দুর্নীতির কারণে একদিকে অতি উচ্চ ব্যয়ে সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অন্যদিকে নির্মিত সড়ক ও সেতুর মান খারাপ হচ্ছে ও টেকসই হচ্ছে না, প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য অর্জনকে ব্যাহত করছে।এবং জাতীয় সম্পদের বিপুল পরিমাণ অপব্যবহার ও অপচয় হচ্ছে।
কিভাবে রাজনীতি ও সংশ্লিষ্ট আমলা ও ঠিকাদাররা মিলে ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রমের উপর প্রভাব বিস্তার করতো সে বিষয়টিতেও তিনি কথা বলেন।
উন্নয়ন কার্যক্রমের নীতি নির্ধারন,সরকারি ক্রয় ব্যাবস্থা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে করায়ত্ত করা হয়েছে।
টিআইবি প্রধান মনে করে, সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে স্বার্থের দ্বন্দ রয়েছে।আছে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের মধ্যে আইনের লংঘন। রয়েছে অনিয়ম, দুর্নীতিসহ সুশাসনের লংঘন ও অনিয়ম। দুর্নীতিসহ সুশাসনের সব সূচকে ব্যাপক ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে।
গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে টিআইবি প্রধান যে তথ্যটি দেন তা হলো—ত্রিপক্ষীয় যোগসাজশের মাধ্যমে সড়ক ও মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনিয়ম দূর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরন করা হয়েছে। এভাবে কিছু দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জনের অবাধ সুযোগ তৈরি করা হয়েছে।
গবেষণায় আরো যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তা হলো—কিছু ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প অনুমোদন, সভায় দ্রুততার সংগে প্রস্তাব উত্থাপন করা,
গোপনে প্রকল্প প্রস্তাব মূল্যায়ন সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করতে সওজার কোনো কোনো কর্মকর্তা, পরিকল্পনা কমিশনের কিছু কর্মচারীদের ২- ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুস দেয়া,প্রকল্প প্রণয়নের সময় অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে অতিরিক্ত প্রকল্প ব্যায় প্রাক্কলন,এক্ষেত্রে কখনো কখনো প্রাক্কলিত বাজেটের ২৫- ৩০ শতাংশ অতিরিক্ত প্রাক্কলন করা হয়েছে।
দুর্নীতি এমন একটি ব্যাধি যা ধীরে ধীরে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগুলো কে ঘুণ পোকার মতো
খেয়ে ফেলে।আর দূর্নীতির আতুর ঘর হলো স্বৈরাচারি শাসন ব্যাবস্থা। দূর্নীতি নামকএই ঘুণ রাষ্ট্রের কোনো জায়গায় যেন ঘাটি গেড়ে বসতে না পারে সে ব্যাপারে সচেতন হতে হবে সকল দেশপ্রেমিক নাগরিক কে।